ফেলে আসা দিনগুলো


কাইয়ুম আহমেদ  
আজও মনে পড়ে স্কুলের স্মৃতি, পড়ে মনে সেই দীঘির কথা, দূর্গা সাগর সে দীঘির নাম। সেই দিনগুলি ভেবে কখনও আনন্দ, কখনও পাই ব্যথা। অঙ্কের স্যারের(নামটা মনে নেই) ক্লাস ফাঁকি, বন্ধুদের টিফিন চুরি, পেটে ব্যথার ভান করে মাঝে-মধ্যেই স্কুলে না যাওয়া, কত দস্যিপনা আরও কত কী! আরও কত শত স্মৃতি। কালের তরীতে ভেসে সেই সোনালি দিনগুলো হারিয়ে গেছে। শৈশব-কৈশোরে ফেলে আসা দিনগুলি জানি আর কখনো আসবে না ফিরে, তাতে কী? মধুময় সেই অতীত স্মৃতি, কে পেরেছে ভুলতে কবে? সত্যিই জীবনের ক্যানভাসে এমনকিছু স্মৃতির ছবি আঁকা হয়ে যায়, যা ভোলা যায় না কখনোই। বিশেষ করে চিরচঞ্চল বয়সের দূরন্ত কৈশোরের স্কুল জীবনের কথা। হয়তো বয়সের ভারে সেই ছবিতে ধুলো পড়ে যায় কিন্তু ধুলি সাফ করলেও স্মৃতির আয়নায় ওঠে ভেসে সেই সোনাঝরা দিনগুলো। 
কবে কার কোন অবেলায় সেইসব দিনগুলি হারিয়েছি ধীরে!বরিশালের সেই দীঘি ঘিরে, কত গল্পও গাঁথা আছে-পুঁথিতে। সাগরঘেঁষা প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপ বারবার বর্মি আর পূর্তগিজ জলদস্যুদের অবাধ লুণ্ঠন ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় শ্রীনগর ( মাধবপাশায় ) চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠা করেন  চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের কীর্তিমান পুরুষ, রাজা রামচন্দ্র রাজবাড়ির কিছুই অবশিষ্ট নেই। বেশ কিছু দীঘি যার অধিকাংশই এখন ভড়াট হয়ে গিয়েছে , তা এখন কালের সাক্ষী। রাজবংশের অধিকাংশ সদস্য এবং জমিদারেরা বর্তমানে ভারতে বসবাস করছেন। ১৯৫০ এর দাঙ্গায় জমিদার বাড়িতে কয়েকশত হিন্দুকে হত্যা করা হয়  


রাজবংশের রাজা শিব নারায়ণের প্রজাবৎসল স্ত্রী রানী দুর্গাবতী ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে বিশাল এক দীঘি খনন করে এখনো অমর হয়ে আছেন। তার নামেই এই দীঘি- দূর্গা সাগর  নামে পরিচিত সাগর দিয়ে এর বিশালত্বকে বুঝানো হয়েছে। এত বড় দীঘি বরিশাল বিভাগে আর নেই। এটি এখন পর্যটকদের এবং প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে একটি সুন্দর স্থান। বিশাল সিমেন্টের প্রশস্ত ঘাটলা , দীঘির মাঝে একটি সুন্দর দ্বীপ , যেখানে শীতকালে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। পাখিদের অভয়ারণ্য এই এলাকা দীঘির পারে সরু রাস্তা , মাঝে মাঝে বসার বেঞ্চ , ঘন সবুজ বিভিন্ন ধরনের গাছঅনাবিল শান্তি। সেই শান্তি আজও খুঁজে ফিরি-স্মৃতির আয়নায় চোখ মেলে। 

মন্তব্যসমূহ